গায়ত্রী-বাবুলের পরকীয়ার চিরকুটের লেখা হাতের নমুনা পরীক্ষা করতে চায় পিবিআই

স্ত্রী হত্যায় নিজের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সঙ্গে ইউএনসিসিআর এর কর্মী গায়ত্রী অমর শিংয়ের পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি ইতোমধ্যে তদন্তে উঠে এসেছে। গায়ত্রীর খোঁজ নিতে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউএনসিসিআরকে চিঠি দিয়েও আফ্রিকার একটি দেশে কর্মরত ওই নারী এনজিও কর্মীর হদিস পায়নি তদন্ত সংস্থা পিবিআই। এবার গায়ত্রীর সঙ্গে বাবুলের যে পরকীয়া সংক্রান্ত চিরকুট আদান প্রদানের বিষয়টি মামলার এজহার ও তদন্তে উঠে এসেছে তার সত্যতা যাচাই করতে চায় পিবিআই। আদালতের সামনেই বাদী থেকে আসামি বনে যাওয়া বাবুলের হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ করার আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
গত ৭ মার্চ চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ আবেদন করা হয়। যদিও এ বিষষে আদেশ হবে পরবর্তী শুনানির দিন।

Add
Add

বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক সিভেয়সকে বলেন, ‘বাবুল আক্তার আর গায়ত্রীর প্রেমালাপ সংক্রান্ত যেসব বিষয় মামলার এজহার ও তদন্তে উঠে এসেছে সেই সবের শতভাগ সত্যতা নিশ্চিতে আদালতের সামনেই বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা পরীক্ষার আবেদন করেছি। আদালত সে বিষয়ে এখনো আদেশ দেয়নি।’

আবেদনের একাংশে উল্লেখ করা হয়, ‘ইংরেজি হাতের লেখার সঙ্গে তুলনামূলক পরীক্ষার জন্য আসামির (বাবুল আক্তার) ইংরেজী নমুনা হাতের লেখা একান্ত প্রয়োজন। তাই বিজ্ঞ আদালতের সম্মুখে আসামির নমুনা হাতের লেখা গ্রহণের আদেশ প্রদান এবং নমুনা হাতের লেখা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে বিজ্ঞ আদালতের সদয় মর্জি হয়।’

পিবিআই সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে কর্মরত থাকার সময় ২০১৩ সালে ইউএনসিসিআর এর কর্মী গায়ত্রী অমর শিংয়ের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন বাবুল আক্তার। এই নিয়ে স্ত্রী মিতুর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ শুরু হয় মিতুর। কলহের সময় মিতুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন বাবুল। এরই মধ্যে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সুদানে জাতিসংঘ শান্তিমিশনে সুদানে ছিলেন বাবুল আক্তার। এই সময় বাবুল আক্তারের মোবাইল ফোনটি চট্টগ্রামের বাসায় ছিল। ওই মোবাইল ফোনে মোট ২৯ বার ম্যাসেজ দেন গায়ত্রী অমর শিং।

এরই মধ্যে গায়ত্রী অমর শিংয়ের দেওয়া দুটি বই পাওয়া যায়। বই দুটি বাবুল আক্তারকে উপহার দিয়েছিলেন গায়ত্রী। ওই বইয়ের একটির তৃতীয় পৃষ্ঠায় গায়ত্রী নিজ হাতের লেখা রয়েছে ‘05/10/13, Coxs Bazar, Bangladesh. Hope the memory of me offering you this personal gift. shall eternalize our wonderful bond, love you. Gaitree.’ একই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় ২৭৬ এর পরের পাতায় বাবুল আক্তারের নিজের হাতে ইংরেজিতে গায়ত্রী’র সঙ্গে সাক্ষাতের কথা লেখা আছে। তিনি লিখেছেন (বাবুল) ‘First Meet: 11 Sep, 2013, First Beach walk 8th Oct 2013, G Birth day 10 October, First kissed 05 October 2013, Temple Ramu Prayed together, 13 October 2013, Ramu Rubber Garden Chakaria night beach walk.’

মূলত এই পরকীয়া প্রেমের কারণে বাবুল মিতুর দাম্পত্য অশান্তি চরমে পৌঁছে। বাবুল আক্তারের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে মিতু প্রতিবাদ করলে তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। গত ৬ জুন ২০১৬ ইং তারিখে পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে যে হত্যা মামলাটি দায়ের করেছেন সেই মামলার তদন্ত পর্যায়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাদী বাবুল আক্তার জড়িত থাকার প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়ায় উক্ত মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন সত্য, ধারা ৩০২/১০৯/৩৪ পেনাল কোড বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন।

এসব অভিযোগ বাবুলের করা মামলা না থাকলেও মিতুর বাবার করা মামলায় পরবর্তীতে যুক্ত করা হয়। পরে সেই মামলাটির চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে আদালত দুই মামলার সব কার্যক্রমকে একীভূত করার আদেশ দেন।

মিতু হত্যা মামলার আসামিরা হলেন, সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার, তার সোর্স মো. কামরুল ইসলাম শিকদার, এহতেশামুল হক ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াশিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খায়রুল ইসলাম কালু ওরফে কসাই কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার ও শাহজাহান মিয়া। সি ভয়েস